Friday, June 15, 2018

কে বিচার করে? কে করে বিশ্লেষন, সবাই যে ব্যস্তজন।

যারা সেনা সদস্য ছিল, মুক্তিযুদ্ধে তাঁদের কোন প্রশিক্ষন নিতে হয়নি; তাই বলে বেসামরিক যোদ্ধাদের চেয়ে তাঁদের অবদান বেশী নয়; তারপরেও তারাই হলেন ৭ জন বীর শ্রেষ্ঠ; 
রহস্য এখনো উন্মোচিত হয়নি আর হবেও না। বঙ্গবন্ধু নিজেই অনুমোদন দিয়ে গেলেও প্রস্তাবক ব্রিগেডিয়ার আমিন উদ্দিন আহমেদ চৌধূরী কে এম শফিউল্লাহ ইচ্ছে মতই মহান স্বাধীনতার সকল শ্রেষ্ঠতম প্রশংসার সনদ ছিনিয়ে নিলেন বেসামরিক যোদ্ধাদের নিকট থেকে। 
সাবেক এম পি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মরহুম সৈয়দ মোহসীন আলী সাহেব ঠিক কথাটিই বলেছিলেন। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত নসীব করুন। আমিন

জীবনীঃ

সৈয়দ মহসীন আলীর বাবার নাম সৈয়দ শরাফ আলী। তিনি ব্যবসায়ী ছিলেন। সৈয়দ মহসীন আলীর মায়ের নাম আছকির”নন্নেছা খানম। মৌলভীবাজার থেকে ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে তিনি কলকাতা চলে যান। কলকাতার আলীপুরে ছিলো তার বিশাল বাড়ি। আলীপুরের সেই বাড়িতে ১৯৪৮ সালের ১২ই ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৫ ভাইদের মধ্যে তিনি সবার বড় ছিলেন। সৈয়দ মহসিন আলীর শিক্ষা জীবন শুর” হয় কলকাতায়। তিনি কলকাতার সেন্টজেবিয়ার্স স্কুলে জুনিয়র কেমব্রিজ ও সিনিয়র কেমব্রিজ পাস করেন। পরবর্তীকালে আবার বাংলাদেশে এসে বাংলা মাধ্যমে কিছুদিন পড়াশুনা করেন। তবে আবারও তিনি কলকাতা থেকে ম্যানেজমেন্টে ডিপ্লোমা করেন।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। দেশমাতৃকার প্রতি তার মমত্ববোধের কারণে স্বত:স্ফুতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে। সম্মুখসমরে যুদ্ধ চলাকালে গুলিবিদ্ধও হয়েছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সিলেট বিভাগে সিএনসি স্পেশাল ব্যাচের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কাজ করেছেন যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ গঠনেও। তিনি সামাজিক ও রাজনৈতিক কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন।
মৌলভীবাজার মহকুমার রেডক্রিসেন্ট সোসাইটিতে তিনি ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মৌলভীবাজার জেলা আওয়ামী লীগ যুবলীগের সভাপতি হিসেবে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীকালে জেলা আওয়ামী লীগেরও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতাত্তোরকালে তিনিই একমাত্র জননেতা যিনি পৌরসভায় পর পর ৩ বার বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৯২ সালে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে তাকে শ্রেষ্ঠ পৌরসভার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত করে।

২০১৪ সালের ১২ই জানুয়ারি তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব লাভ করেন। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর তিনি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পগুলোকে ঢেলে সাজিয়েছেন। সেখানে এখন বহুমুখী বাস্তবসম্মত প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সমাজসেবায় অবদান রাখার জন্য তিনি ভারতের নেহের” সাম্য সম্মাননা ও আচার্য দীনেশ চন্দ্র সেন সম্মাননা স্বর্ণপদক লাভ করেন।
সাহিত্য ও সাংবাদিকতা ছিলো তার পছন্দের বিষয়। অবসরে তিনি বই পড়তে ভালবাসতেন। কবি-লেখকদের সঙ্গে নিয়মিত আড্ডা দিতেন। দেশের বড় বড় সাংবাদিকদের অনেকেই ছিলেন তার ব্যক্তিগত বন্ধু। তিনি এক সময় বাংলাদেশ টাইমসের প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। একজন সৎ রাজনীতিবিদ হিসেবে নিজের সম্পদ বিক্রি করে রাজনীতি করেছেন বলে তাঁর সুখ্যাতি ছিলো।

LikeShow more reactionsCommentShare

লীডার পড়ুনঃ কাজে লাগবেঃ মোকতেল হোসেন মুক্তি

লীডার পড়ুনঃ কাজে লাগবেঃ মোকতেল হোসেন মুক্তি

স্বাধীনতাবিরোধী জামাত শিবিরের গুপ্তহত্যা বন্ধ হয়নি; যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদন্ডের কারনে এ হত্যাকান্ড এখনো চলছে। সুমন হত্যা তার প্রমান! ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিষ্ট। যারা মুক্তিযুদ্ধের কথা বলে, যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে স্বাক্ষী দিয়েছে, যারাই ওদের ফাঁসির জন্য বিশ্বব্যাপী প্রচার সভা সমিতি সেমিনার করে বিশ্ব ও দেশবাসীসহ সরকারকে উৎসাহ প্রদান ও কাপজপত্র দলিল পত্র ছবি ইত্যাদি দিয়ে সাহায্য সহযোগিতা করেছে; তাদেরকে এবং তাঁদের বংশের চিনহ বাংলার মাটিতে এই জামাত শিবির রাখবে না-এর জন্য এসেছে মধ্যপ্রাচ্য ও পাকিস্তান থেকে বড় ধরনের বাজেট অস্ত্র ও প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত জংগির বহর।

গোপনসূত্রে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায় এরা বর্তমানে আওয়ামী লীগ তথা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তির চোখ ও নজরদারী এড়িয়ে যাবার চতুর ও ধূর্ত কৌশল অবলম্বন করেই সারা দেশে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন শাখা কমিটিতে বড় অংকের উতকোচ প্রদানের মাধ্যমে নেতাদের মন জয় করছে এবং আওয়ামী লীগের আসল ত্যাগি তৃনমূল নেতা কর্মীদের চেয়ে গভীর ও প্রচন্ড দেশ প্রেম বঙ্গবন্ধু প্রেম ও নৌকার জয়ও গাণে মাঠ দখল করছে। বিষয়টি নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাও ভাবছে এবং কঠোর নজরদারীর মাধ্যমে সাবেক তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের সংমিশ্রন ও সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখছে।
সূত্র আরো জানায় যে লন্ডনে অবস্থানরত জঙ্গিদের সাথে তারেক রহমানের সন্তোষজনক সমঝোতার সুবাদেই এ ধরনের গুপ্ত হত্যার একটি স্কীম নিয়ে জঙ্গিরা বাংলাদেশে অবস্থান করছে তবে এর সাথে শুধু জামাত বি এন পি নয়, এর সাথে রয়েছে হুজি জেমবি বাংলা ভাই (আন্সারুল্লাহ) ও অন্যান্ন নতুন নতুন ক্ষুদ্র জঙ্গি সংগঠনসমূহ।

আশংকা করা হচ্ছে আসন্ন ২০১৮ সালের সংসদীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের জাতীয় পর্যায়ের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা কর্মীকে হত্যা করা হবে অতি কৌশলে যার কোন ক্লু গোয়েন্দা সংস্থা খুজে বেড় করতে হিমশিম খাবে। 
সাবধান!

LikeShow more reactionsComment

রেললাইনের পাশে শহীদ সাংবাদিকের ছেলের লাশ ► যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজে স্বাক্ষী হওয়ার মাসুল দিল সুমন ► মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সাক্ষী ছিলেন সুমন ► পরিবারের অভিযোগ পরিকল্পিত হত্যা

রেললাইনের পাশে শহীদ সাংবাদিকের ছেলের লাশ
► যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজে স্বাক্ষী হওয়ার মাসুল দিল সুমন 
► মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সাক্ষী ছিলেন সুমন
► পরিবারের অভিযোগ পরিকল্পিত হত্যা
Image may contain: 1 person, hat, sunglasses and outdoor
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বাগিচা এলাকায় রেললাইনের পাশ থেকে শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদের (৫৬) লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রেললাইনের পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করে পুলিশ। 
সুমন জাহিদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষী ছিলেন। ট্রেনে কাটা পড়ে তিনি মারা গেছেন বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করলেও তাঁর মৃত্যু নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি ও নিহতের পরিবার। পরিবারের সদস্যরা জানায়, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষী দেওয়ায় সুমন একাধিকবার হত্যার হুমকি পেয়েছিলেন। গতকাল সকালে তাঁকে বাসা থেকে কে বা কারা ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, সুমন ফারমার্স ব্যাংকের শান্তিনগর শাখার সেকেন্ড অফিসার ছিলেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি ফেনী। স্ত্রী টুইসি এবং দুই ছেলে স্মরণ ও সুমন্দ্রকে নিয়ে উত্তর শাহজাহানপুর এলাকায় থাকতেন তিনি। স্মরণ টিঅ্যান্ডটি কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আর সুমন্দ্র আইডিয়াল স্কুলে সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। সুমন জাহিদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক চৌধুরী মাঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে সাক্ষী ছিলেন। চৌধুরী মঈনুদ্দীন ও যুক্তরাষ্ট্রে পলাতক আশরাফুজ্জামান উভয়কেই শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল।
নিহতের বড় ভায়রা এ টি এম এমদাদুল হক বুলবুল বলেন, গতকাল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কে বা কারা সুমনকে উত্তর শাজাহানপুরের বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপরই রেললাইনের পাশে তাঁর লাশ পাওয়ার খবর শোনা যায়। সুতরাং তাঁকে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এমদাদুল হক বুলবুলের অভিযোগ, ‘সুমনকে এর আগেও বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হয়েছে। দুই বছর ধরে তিনি অনেকবার হুমকি পেয়েছেন। তাই আমরা ধারণা করছি, পরিকল্পিতভাবে তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, আজ (গতকাল) সকালে বাসা থেকে বেরিয়ে অফিসে চলে যাই। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার দিকে সুমন জাহিদের স্ত্রী টুইসির ফোন পেয়ে দ্রুত ছুটে যাই তাঁদের বাসায়। তাঁর পরিবারের কাছ থেকে যতটুকু শুনেছি, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় বাইরে। আট বছর বয়সে সুমন জাহিদের সামনেই তাঁর মা সেলিনা পারভীনকে আল বদররা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর থেকে শুরু তাঁর সংগ্রামী জীবন। স্কুটার চালিয়ে লেখাপড়া করেছেন। শত সংগ্রামের পথ পেরিয়ে একটা পর্যায়ে এসেছিলেন তিনি। এমন সংগ্রামী সুমনের আত্মহত্যা করার প্রশ্নই ওঠে না। সুমন খুব সচেতন ছিলেন। বাসা থেকে তিনি সব সময় মোটরসাইকেল নিয়ে বের হতেন। কিন্তু আজ (গতকাল) তাঁর সঙ্গে মোটরসাইকেল ছিল না। তাঁর মতো একজন সচেতন মানুষের সামনে এত বড় ট্রেন আসবে আর তিনি ট্রেনে কাটা পড়বেন, এটা হতেই পারে না।
ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির এক নেতা জানান, কয়দিন আগে মুন্সীগঞ্জে শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যা করা হয়েছে, এর আগে আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ভাইকে খুন করা হয়েছে। স্বাধীনতাবিরোধী কোনো চক্র আবার জেগে উঠছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুমনের ঘটনাটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারা, কিভাবে এবং কেন এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে। 
নিহতের শ্যালক সারোয়ার হোসেন বলেন, সুমন ওখানে (খিলগাঁও) যাওয়ার পেছনে নিশ্চয় কারণ আছে। তাঁকে বাসা থেকে ডেকে কৌশলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর তিনি যে আত্মহত্যা করবেন সে রকম কোনো কারণও দেখছি না। তাঁর দাবি, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার সাক্ষী দেওয়ায় সুমনকে হত্যা করা হয়েছে। সুমন ব্যাংকে চাকরি করলেও চার মাস আগে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি আরো বলেন, যেখানে তাঁর লাশ পাওয়া গিয়েছিল, বাসা থেকে হেঁটে সেখানে যেতে ৮-১০ মিনিট লাগে। ঘটনাটি খুবই রহস্যজনক। আশা করি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত করে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করবে।
শাহজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল মামুদ জানান, তারা গিয়ে ঘটনাস্থলে খণ্ডিত লাশটি দেখেন। তাঁর মাথা থেকে দেহ বিচ্ছিন্ন ছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, কজন বলেছেন, ওই ব্যক্তি রেললাইন পার হওয়ার সময় হোঁচট খেয়ে পড়ে যান। এরপরেই কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেন তাঁর শরীরের ওপর দিয়ে চলে যায়।
ঢাকা জেলা রেলওয়ে পুলিশ সুপার আশরাফুল আলম বলেন, প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, এটি একটি দুর্ঘটনা। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার আগে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। ঘটনাটি নিয়ে বিভিন্ন সংস্থা তদন্ত করছে।
ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক বলেন, খিলগাঁও বাগিচা এলাকায় হিকমাহ আই হসপিটালের পাশে সুমন জাহিদের লাশ পাওয়া যায়। তিনি ট্রেনের নিচে পড়েন বলে স্থানীয় লোকজন জানিয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। আমরা সকাল ১০টার দিকে খবর পেয়ে খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠাই। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তার পরও বিষয়টি জোরোলোভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়জন দোকানি কালের কণ্ঠকে জানান, কমলাপুর থেকে ছেড়ে আসা একটি ট্রেনের নিচে পড়ে তিনি মারা যান। তা ছাড়া ট্রেন আসার সময় রেললাইনের আশপাশে কোনো লোকও থাকে না। ট্রেনটি চলে যাওয়ার পর তাঁর দ্বিখণ্ডিত লাশ দেখতে পাওয়া যায়। এ সময় মিনিট দশেকের মতো ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
কমলাপুর রেলওয়ে থানার এসআই আনোয়ার হোসেন বলেন, খবর পেয়ে সকাল পৌনে ১০টায় খিলগাঁও বাগিচা মসজিদসংলগ্ন রেললাইন থেকে সুমনের লাশ উদ্ধার করা হয়। রেললাইন ঘেঁষেই সুমন জাহিদের লাশ পড়ে ছিল। আমরা ধারণা করছি, ট্রেনের চাকা তাঁর গলার ওপর দিয়ে গেছে। তবে কোন ট্রেন তা আমরা নিশ্চিত হতে পারিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ : এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ছিল তিন শিশু। এদের একজনের নাম নার্গিস। সে খিলগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। ঘটনাস্থল বাগিচা এলাকার রেললাইনের পাশে একটি টংঘর চায়ের দোকান। গতকাল সকাল ৯টার দিকে সুমন জাহিদ ওই চায়ের দোকানে বসে চা খান। এ সময় দোকানের সামনে খেলারত তিন শিশুর সঙ্গে তিনি কথাও বলেন। প্রায় ১০ মিনিট তাদের সঙ্গে গল্প করেন তিনি। এরই মধ্যে ট্রেনের হুইসেল শুনতে ছুটে যান রেললাইনে। লোহার দণ্ডের ওপর গলা রেখে আড়াআড়ি শুয়ে পড়েন। দৃশ্যটি দেখে নার্গিসসহ তিন শিশু ছুটে যায়। নার্গিস তার পা ধরে টেনে আনার চেষ্টা করে। নার্গিস বলে, ‘আপনি সইরা যান। ট্রেন আইতাছে। তখন সুমন জাহিদ তাদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। নার্গিস রেললাইন থেকে নিচে চলে যায়। এ সময় রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি দ্রুতগতিতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। মুহূর্তেই রেললাইনের বাইরে সুমন জাহিদের মাথাটি ছিটকে পড়ে। মাথাবিহীন ধড় পড়ে থাকে রেললাইনের ভেতরে।’
ঢাকা রেলপথ থানার ওসি ইয়াসিন ফারুক বলেন, ঘটনার পর আশপাশের লোকজনের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। টংঘরের চায়ের দোকানি বলেছেন, ওই ব্যক্তি নিজেই রেললাইনে শুয়ে পড়েন। এর আগেও ওই ব্যক্তি গত চার দিন ধরে সকালে ওই দোকানে চা খেয়েছেন। তাঁকে খুব চুপচাপ থাকতে দেখা যেত।
সুমন জাহিদ অনেক সংগ্রাম করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিনি কিছুদিন সাংবাদিকতা করেন। একসময় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল নাইনে প্রশাসনিক পদে চাকরি করতেন। পরে ফারমার্স ব্যাংকের শান্তিনগর শাখায় কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। চার মাস আগে ফারমার্স ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে দেন। ব্যাংকটি দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকরা টাকার জন্য তাঁর ওপর চাপ দিচ্ছিলেন। তাঁরই পরিচিতজনরা ফারমার্স ব্যাংকে টাকা গচ্ছিত রেখেছিলেন। এ কারণে ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার পর পরিচিতরা টাকার জন্য তাঁকে চাপ দিতে থাকেন। এ কারণে তিনি হতাশায় ভুগছিলেন।
ময়নাতদন্ত : এদিকে সুমন জাহিদের ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ভিসেরা সংগ্রহ করা হয়েছে। লাশের পিঠে, মাথায়, মুখের সামনে, গালে ও নাকে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তবে মনে হচ্ছে শরীর থেকে মাথা আলাদা হয়েছে ট্রেনের চাকায় কাটা পড়ে। সুমনকে অজ্ঞান করে রেললাইনের ওপর রেখে গেছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল মাহমুদ বলেন, হতে পারে। তিনি বলেন, ভিসেরা ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন একসঙ্গে করে এরপর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়া হবে। তখন নিশ্চিত হওয়া যাবে কিভাবে মারা গেছেন।
সুমন জাহিদের মৃত্যুতে শোক : ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি সুমনের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, এটি একটি নিছক দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, সে বিষয়ে দ্রুত তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। ১৯৭১ সালে তাঁর মা সাংবাদিক সেলিনা পারভীনকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনী। পরে ১৮ ডিসেম্বর রায়েরবাজার বধ্যভূমি থেকে উদ্ধার করা হয় তার মৃতদেহ। নিউ সার্কুলার রোডের বাড়ি থেকে মাকে যখন ধরে নিয়ে যায়, ছোট্ট সুমন তখন বাড়ির ছাদে খেলছিল। সুমনের অকাল মৃত্যুতে তাঁর স্ত্রী ও শিশুসন্তানদের দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছে নির্মূল কমিটি।
নির্মূল কমিটির পক্ষে বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী, বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম, বিচারপতি শামসুল হুদা, সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, অধ্যাপক অজয় রায়, সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী, লেখক-সাংবাদিক আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী, সাংবাদিক কামাল লোহানী, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, অধ্যাপক অনুপম সেন, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শিল্পী রফিকুন নবী, অধ্যাপক পান্না কায়সার, স্থপতি রবিউল হুসাইন, লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী প্রমুখ।
কালের কণ্ঠ’র ফেনী প্রতিনিধি জানান, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের সন্তান সুমন জাহিদের রহস্যজনক মৃত্যুতে ফেনীতে তাঁর নানা বাড়িসহ গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। ফেনী শহরের শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক (নাজির রোড) এলাকার মাস্টার বাড়িতে সুমনের নানার বাড়ি। সুমনের মামাতো ভাই মিজানুর রহমান শাহীন জানান, খুবই মাটির মানুষ ছিলেন সুমন ভাই। তাঁর রহস্যজনক মৃত্যুতে সবাই হতবাক ও শোকাহত। তিনি জানান, মাঝেমধ্যে ফেনীতে আসতেন তিনি। নানা সংগঠনের সঙ্গে তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ ছিল।
পারিবারিক সূত্র জানায়, ফেনীতে একাধিক সামাজিক ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সুমনের। তিনি নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ফেনীতে আসতেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ড ফেনী শাখার সভাপতি রুপক হাজারী এ ঘটনাকে রহস্যজনক বলে অভিহিত করেন এবং প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে এ রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানান।